ধর্ম হচ্ছে নিজেকে শাসন করার জন্যে, অন্যকে নয়। যিনি ধর্মকে সঠিক ভাবে নিজের মধ্যে ধারণ করে জীবন যাপন করেন তিনিই প্রকৃত ধার্মিক। আর যিনি ধর্মকে অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন বা অন্যকে কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম পালনে বাধ্য করেন তিনি কখনোই সহি ধার্মিক নন বরং তিনি ধর্মের মুখোশের আড়ালে আপন স্বার্থ হাসিলের একটি অসত চরিত্র লালন করেন।
বাংলাদেশের মতো একটি বহুজাতিক মানুষের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা ও জাতীয় নিয়মনীতির সাথে কোনো স্পেসিফিক ধর্মের সম্পৃক্ততা থাকাটা নৈতিক নয়। থাকলে তা নতুন এক ফ্যাসিবাদের জন্ম দিবে যা নিজেদের ধর্মীয় মতাদর্শ অন্য সকলের উপর চাপিয়ে দিয়ে সকলের সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার অধিকার হরণ করবে।
আমাদেরকে এমন একজন শাসক নির্বাচন করতে হবে যার শাসনে আমরা সকলে নিজ নিজ ধর্ম পালনের এবং না পালনের সম অধিকার পাবো, যিনি সকলের ধর্মের ও মতাদর্শের স্বাধীণতা নিশ্চিত করবেন। আমরা কোনভাবেই এমন কোনো ফ্যাসিবাদী শাসক চাইবো না যিনি তার নিজের ধর্মীয় আকিদা, মতাদর্শ ও দর্শন আমাদেরকে মানতে বাধ্য করবেন।
ইসলাম ধর্মের আকিদা ও শাসন দিয়ে কোনভাবেই হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা যিনি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের অধীনে নেই তার অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব না, একই ভাবে অন্য যেকোনো ধর্মের বিধান দিয়েও ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই ধর্ম হবে ব্যক্তির, রাষ্ট্র হবে সকলের। রাষ্ট্র কোনো ধর্ম বিশ্বাস করবে না, রাষ্ট্র বিশ্বাস করবে তথ্য, প্রমাণ ও যুক্তিতে এবং রাষ্ট্রের আইন হবে সকল ধর্ম বর্ণের ঊর্ধ্বে।
এখন কেউ যদি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় বসে প্রতিহিংসাপরায়ণ হইয়ে রাষ্ট্রের সিস্টেমের রিসেট বাটন চেপে আমাদের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, ইতিহাস, অসাম্প্রদায়িকতা ও বৈচিত্রময় এই সোনার বাংলার আদর্শ মুছে দিয়ে কোনো ধর্মান্ধ রাষ্ট্র ব্যাবস্থা কায়েম করতে চায় তবে তারে এখনই এই সিস্টেম থেকে লগ-আউট করে দিতে হবে।
দেশে এখন মৌলবাদের জয়জয়কার শুরু হতে যাচ্ছে, সেইসাথে উগ্র মতাদর্শে বিশ্বাসী ধর্মীয় সন্ত্রাস ও জঙ্গিরা অর্গানাইজড হচ্ছে। এবং চারিদিকে ক্রমশঃই প্রসারিত হচ্ছে ধর্মভিত্তিক ফ্যাসিবাদী মতাদর্শের রাজনৈতীক অপশক্তি। এইটা এইভাবে চলতে দিলে দেশ এক ধর্মান্ধতার অন্ধকারে তলিয়ে যাবে।