মুসলমান কত প্রকার?

sadekmahmud

August 3, 2022

মুসলমান কত প্রকার?

মুসলমান শুধু দুই প্রকারের হয় –

১. সহি মুসলমান,

২. সহি মুসলমান না। 

এখন যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি কি সহি মুসলমান? তাহলে কী উত্তর দিবেন? হ্যাঁ নাকি না? যদি উত্তর দেন যে আপনি সহি মুসলমান না। তাহলে আপনাকে আর কিছু বলার নেই। একজন ব্যক্তি নিজেকে মুসলমান মনে করেন অথচ তিনি জানেন যে তিনি সহি মুসলমান নন, এমন অ’সহি মুসলমানের বিষয়ে আল্লাহপাক কোরআনে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। আয়াত উল্লেখ করে আর আপনাকে সহি করলাম না। সূরা বাকারা থেকে পড়তে শুরু করুন, অনেক আয়াত পেয়ে যাবেন।

এবার আসি যিনি হ্যাঁ’ বলেছেন বা নিজেকে সহি মুসলমান মনে করেন তার কাছে।

আপনি সহি মোসলমান হয়ে ইসলামের কোন তরিকায় ধর্ম চর্চা করেন ?

আপনি কি শিয়া ?  নাকি সুন্নি ? নাকি হানাফি, মালিকী, শাফেয়ী, হাম্বলী, যাহিরি, জাফরি, যাইদি, ইবাদি, জামাতি, ওয়াহাবি, কাদিয়ানী, সূফী, আহলে হাদিস, হেজবুত তওহিদি, পীর ভক্ত বা মাজার পুজারি? নাকি অন্য কোন নতুন তরিকায় আছেন ? এইসব ইসলামী সংগঠন বা দলের মধ্যে আপনি আসলে কোনটা ?

আপনি এখানের যেটিই হন ব্যাপারনা, আপনি যেকোনো তরিকাতেই একজন সহি মুসলিম হতে পারেন।একজন সহি মুসলিম হিসেবে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন।

এই প্রশ্নগুলোর সুবিধা হলো এর উত্তর আমাকে না দিলেও চলবে। আপনি  নিজেকেই এর উত্তর নিজে দিন। 

প্রশ্ন- ১: আপনি কি কোরআন শরীফ তর্জমা তাফসিরসহ পুরোটা পড়েছেন?

প্রশ্ন- ২: বই আকারে প্রথম কোরআন সংগৃহীত হয় নবীর মৃত্যুর কত বছর পরে ?

প্রশ্ন- ৩: প্রথম কোরআন একটি বই আকারে সংগৃহীত করার সময় কোনও আয়াত বা সুরা বাদ দেয়া হয়েছে কী? যদি হয়ে থাকে তাহলে সেটা বাদ দেবার ক্ষমতা নবীর মৃত্যুর পরে আল্লাহ্‌ কী কাউকে দিয়েছেন?

প্রশ্ন- ৪: হাদিস সংকলন হয়েছে মুহাম্মদের মৃত্যুর কতো বছর পরে?

২০০ বছর। ২০০ বছর  পরে জাল হাদিস আর সহি হাদিসের জাজমেন্ট দেবার ক্ষমতা কে কাকে এবং কেন দিলো?

প্রশ্ন- ৫: সিরাত প্রথম লিখিত হয় মুহাম্মদের মৃত্যুর কত বছর পরে? কে প্রথম লিখিত আকারে এটা সংগৃহীত করেন? কত সনে?

প্রশ্ন- ৬: শরিয়া আইন প্রথম লিখিত আকারে তৈরি হয় কার শাসন আমলে? কত সনে?

প্রশ্ন- ৭: পৃথিবীতে ২৬ টি বিভিন্ন প্রকাশনীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত কোরআন পাওয়া যায়, যা নানান ভাষায় এবং আরবিতে একেকটি একেক রকমভাবে নানান শব্দ বা আয়াতে ভিন্ন ভিন্ন। তাহলে এক এবং অবিকৃত কোরআন আসলে কোনটা? এবং সেটা কার কাছে ?

প্রশ্ন- ৮: একটি মুসলিম রাষ্ট্রে ইসলামিক আইনে বিধর্মীদের এবং একজন মুসলমানের জন্য আইন এবং সুযোগ সুবিধা বা ট্যাক্স বা ব্যাবসায়িক অধিকার কি এক ?

প্রশ্ন- ৯: ইউরোপ আমেরিকাতে  কি একজন মুসলিম নাগরিক কী অন্য ধর্মী বা বিধর্মী সিটিজেন থেকে কম সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন? 

প্রশ্ন- ১০: ইসলামিক আইনে একজন পুরুষ যেসব সুযোগ সুবিধা পাবেন সেই সমস্ত একই সুযোগ বা অধিকার কী একজন নারীও পাবেন?

প্রশ্ন- ১১: সব যদি ইহুদি নাসারা আর আমেরিকার ষড়যন্ত্র হয় তাহলে খলিফারা একে অপরের সাথে যুদ্ধ ও হত্যা হলেন কার ষড়যন্ত্রে?

প্রশ্ন- ১২: মুহাম্মদের আমল থেকে উমাইয়া, আব্বাসিয়, মামলুক, অটোমান, মুঘল শাসন আমলের এত অসংখ্য যুদ্ধের মধ্যে শান্তির বা যুদ্ধবিহিন শাসন আমল কার এবং কবে?

প্রশ্ন-১৩: এত যুদ্ধের ধর্ম ‘শান্তির ধর্ম’ কীভাবে হয়?

প্রশ্ন-১৪: আপনিই কেন সঠিক,  আর বাকিরা কেন সব ভুল?

প্রশ্ন ১৫:  শয়তান যদি সব কুমন্ত্রণা দানের কারণ হয় তাহলে শয়তানকে শয়তান কে বানালো?

প্রশ্ন-১৬: খোঁজ নিয়ে দেখুনতো আগে শরিয়া তারপর হাদিস তারপর মুহাম্মদের জিবনী গ্রন্থিত হয়েছে কীনা। আপনি কী এর মধ্যে কোনও ইঙ্গিত পান?

প্রশ্ন-১৭: মুহাম্মদের জন্মের আগে প্যাগান, ইহুদি, খ্রিস্টান, জরথুস্ত্র ধর্মের মধ্যে ইসলাম সাদৃশ্য কী কী আচার বর্তমান ইসলামে বিদ্যমান?
প্রশ্ন-১৮: হিন্দু, খ্রিস্টান, ইহুদি, বৌদ্ধের দেশে মুসলমানরা বসবাস করলেও আরবের মক্কা মদিনা থেকে কেন সেই অঞ্চলের সব প্যাগান ইহুদি, খ্রিস্টানরা বিতাড়িত? কেন অন্য ধর্মের কেউ সৌদির নাগরিক নয়? 
প্রশ্ন-১৯: ইসলামের শুরু থেকে বর্তমান সময়ের সভ্যতায় মুসলমানরা এমন কী মৌলিক অবদান রেখেছে যেটা প্রাক-ইসলামিক যুগে এই পৃথিবীতে ছিলো না? ]

নারী-পুরুষ এর পরেও যেমন আরেকটা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হয়, আমরা যাদেরকে বলে থাকি হিজড়া। অর্থাৎ, এরা না নারী না পুরুষ। তেমনি, সহি মুসলিম আর সহি মুসলিম না এর পরে আরেকটা জাতের মুসলমান আছে। যাদেরকে বলা যায় মডারেট মুসলমান। এরা হচ্ছে তৃতীয় শ্রেণীর মুসলমান। এরা নিজেরাও জানে না এরা আসলে কী?

আল জাজিরা’র একজন এংকর মেহেদী হাসান হচ্ছেন এমন একজন। যিনি বলছিলেন-

“যারা আত্মঘাতী জঙ্গি তাঁরা সহি মুসলিম নয়, যারা মৌলবাদী যুদ্ধবাজ মুসলিম তাঁরা সহি মুসলিম নয়, তার ভাষায় পৃথিবীর ১৬০ কোটি শান্তিপ্রিয় মুসলিম হচ্ছে সহি মুসলিম।”

অথচ এই ১৬০ কোটি মুসলিম আরবি জানে না। এরা সবাই কোরআন বুঝে পড়ে নাই। এরা বেশিরভাগই ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম এমন সমস্ত কাজ করে শুধু হালাল খাওয়া ছাড়া। ইসলামের সমস্ত বিধি-বিধান এরা নিজের পরিবারের কাছে থেকে পারিবারিকসূত্রে শোনে অথবা কখনও হুজুর আর ইসলামিক স্কলারের কাছ থেকে শোনে। ইসলামিক যে কোনও বিষয় বুঝতে বা জানতে গেলে এরা মৌলবি মোল্লার শরণাপন্ন হয়। ইসলামের বিষয়ে সময় দেবার মতো সময় এদের ব্যক্তিগত জীবনে নেই। এরা জীবনেও ইসলামের ইতিহাস বা প্রাক ইসলামিক আরব সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। এরাও অবৈধ-সেক্স, দুর্নীতি, চুরি, হত্যা, কথায় কথায় মিথ্যা বলা, জুলুম, অন্যায়, অত্যাচার, হারাম নাচ, গান, মদ, জুয়া, পর্ন দেখা থেকে শুরু করে এমন কিছু নাই যে করে না। ১৬০ কোটি মুসলমানদের মধ্যে নিশ্চিত আমরা এমন মানুষই বেশিরভাগ পাবো।

এরা শিক্ষিত, স্কলার, বিজ্ঞানী, শিক্ষক থেকে মূর্খ, অশিক্ষিত, নিরক্ষরও হতে পারে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে শুধু একটাই মিল যে এরা বিশ্বাস করে- ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম। কারণ এটাই তাদেরকে বোঝানো হয়েছে। এরা নিজেরা নিজের ধর্মটাকে যুক্তি দিয়ে বুঝতে বা জানতে সময় দেয় না। আর যারা এই ধর্মের নানাবিধ অসংগতিকে নিয়ে ভাবে। জানতে চেষ্টা করে, পড়াশোনা করে, প্রশ্ন করে,  মেধা খরচ করে সময় দেয়। সেই তাদেরকে এরা নাস্তিক, মুরতাদ, কাফের বলে দেয়। আরেকপক্ষ যারা অন্ধের মতো ধর্মের সমস্ত গোঁড়ামিকে গ্রহণ করে তাদের পূর্ব-পুরুষকে অনুসরণ করে সমস্ত পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য আত্মঘাতী হয়, মানুষ হত্যা করে ইসলামি সাম্রাজ্যবাদ বা খেলাফত প্রতিষ্ঠা করে তাদেরকে বলে দেয়- এরা সহি মুসলিম নয়।

যাদের ভাষা আরবি, যারা ইসলামের জন্য নিজের পরিবার নিজের জীবন উৎসর্গ করে জিহাদে গিয়ে শহীদ হয় তাদের সাথেও নাকী সহি ইসলামের কোনও সম্পর্ক নেই।

আমার আসলে মনে হয়- মডারেট মুসলিম এর সাথেই সহি ইসলামের কোনও সম্পর্ক নেই। এরা আসলে প্রচণ্ড সুবিধাবাদী ও ভণ্ড একটা সম্প্রদায়। যারা গাছেরটাও পারে তলারটাও কুড়ায়।

তারা ইসলামে নিষিদ্ধ সবকিছুর সুবিধা নিবে বা করবে আর বলার সময় বলবে ‘আমি মুসলমান‘। এরা চাঁনরাতে মদ খাবে, সকালে কুরবানি দিবে। পাবলিক্যালি বলবে- ‘মদ খাওয়া হারাম‘। রুম ডেটিং করবে, পরকীয়া করবে, কিন্তু অন্যের ক্ষেত্রে এটাকে গুনাহ বলবে। মাদ্রাসায় ছেলেদের সাথে ছেলেরা সেক্স করবে, কিন্তু সমকামীদেরকে ঘৃণা করবে। এরা আসলে জাগতিক পার্থিব সমস্ত সুযোগ-সুবিধা নেয়ার পাশাপাশি অপার্থিব ঐশ্বরিক জগতের হিস্যাও নিজের দখলে রাখতে চায়। এটা চরম ভণ্ডামি। এজন্য তারা এতোটা অন্ধ হতে পারে যে তাদের ধর্মের ইতিহাস বা সত্য তারা শুনতে বা জানতে চায় না।

যেসব মুসলিম স্কলার বা মর্ডারেট মুসলিম বিশ্বাস করে যে জঙ্গিবাদীরা সহি মুলসিম নয়, বরং সাধারণ মুসলমানেরা যে বিশ্বাস লালন করে সেটাই শান্তির ইসলাম। তাহলে কেন তাঁরা সেইসব জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দেয় না? তারা তো জানে যে ইসলামের ওপর আক্রমণ হলে সেটার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াটা তাদের ঈমানি দায়িত্ব। এক্ষেত্রে তারা ইসলামের নানান বিষয়ে উদ্ধৃতি দেয়া নাস্তিকদের হত্যাকাণ্ডকেও বরং সমালোচনা করে, কিন্তু জিহাদি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে মৌনতা অবলম্বন করে। এটাও কী মডারেট মুসলিমদের হিপোক্রেসি নয়? যারা আপনার ভুল ধরিয়ে দেয় তাদেরকে নাস্তিক বলে হত্যা করাটা কীভাবে সমর্থনযোগ্য হতে পারে? আর যারা ইসলাম ধর্মের নামে আপনাদের ভাষায় (জঙ্গিবাদ ইসলাম ধর্মকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে) তাদের ক্ষেত্রে আপনাদের এই নিরব সমর্থন কেন?

আপনি যদি ভণ্ড না হতেন, আপনি যদি সৎ এবং সত্যি হতেন, তাহলে –

ইসলামকে যারা জেনেছে, হয় তারা জঙ্গি হয়েছে অর্থাৎ ইসলামি খেলাফত চেয়েছে আর নয়তো নাস্তিক হয়েছে। আর যারা ইসলামকে জানে না, তারা হয়েছে হিপোক্রেট মডারেট মুসলিম।

ইসলামকে জেনে বুঝে পড়ে যারা শেষ পর্যন্ত মানবিক, যাদের রবীন্দ্র সঙ্গীত, লালনের গান, চিত্রকলা, সিনেমা, নাটক, খেলাধূলা, মানবিক সমস্তবিষয় পছন্দ তারা নাস্তিক মুরতাদ হয়েছে।

আর যারা, এই সবকিছুই ঘৃণা করে, হারাম জেনে, স্বর্গে গিয়ে- যা ইচ্ছা সব করা যাবে, আগে জিহাদে শহীদ হয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে নেই ভেবেছে, তারা জঙ্গি হয়েছে। তাদের সমস্ত ইসলামি গ্রেট পূর্ব-পুরুষদের মতো। ইসলামের ইতিহাসের যারা বীর তারা প্রায় সকলেই যোদ্ধা।

Leave a Comment